জলঢাকা (নীলফামারী) থেকে মো. ছানোয়ার হোসেন বাদশা
জলঢাকা পৌরসভার সবুজ পাড়া এলাকায় বাকপ্রতিবন্ধী নারী রঞ্জনা রানী তার সাত বছর বয়সী কন্যাসন্তান ও দিনমজুর স্বামীকে নিয়ে বসবাস করছেন এক জরাজীর্ণ টিনের চালার ঘরে। ঘর বলতে কিছু বাঁশ, টিন এবং ছেঁড়া চটের জোড়াতালি দিয়ে তৈরি এক অস্থায়ী আশ্রয়। মাথার ওপর ছাউনি থাকলেও নেই নিরাপত্তা, নেই স্বস্তি। প্রতিদিনের খাবার জোটে কষ্টে। রঞ্জনার স্বামী শিবিন চন্দ্র রায় একজন কায়িক শ্রমিক। প্রতিদিন রাস্তা, নির্মাণ সাইট বা খেত-খামারে শ্রম দিয়ে অল্প কিছু আয় করেন, যা দিয়ে ঠিকমতো চলে না সংসার। কাজ না পেলে না খেয়েই থাকতে হয় তাদের। বাকপ্রতিবন্ধী রঞ্জনা রানী নিজের দুঃখ-কষ্ট ভাষায় প্রকাশ করতে না পারলেও তার চোখের ভাষায় ফুটে ওঠে এক নীরব আকুতি। এছাড়াও তার চাওয়া একটুখানি নিরাপদ আশ্রয়ের, একমুঠো খাবারের, সন্তানের জন্য একটু শিক্ষার সুযোগ। বর্ষা এলেই ঘরের ভেতর পানি ঢুকে পড়ে, শীতের রাতে কাপড় জড়িয়ে কাঁপেন মা ও মেয়ে, আর গ্রীষ্মে টিনচালার ঘরে আগুনের মতো তাপ পড়ে। অথচ এই পরিবারটি পৌরসভা এলাকাতেই বাস করলেও সরকারি সহায়তার আলো এখনও তাদের ঘরে পৌঁছেনি। প্রতিবেশীরা জানান, রঞ্জনার পরিবারটি বহুদিন ধরে এমন মানবেতর অবস্থায় দিন পার করছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের ভাগ্যে জোটেনি সরকারিভাবে নির্মিত ঘর, খাদ্য সহায়তা, প্রতিবন্ধী ভাতা কিংবা শিশুসন্তানের শিক্ষার সুযোগ। বর্তমান সরকার যেখানে আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মাধ্যমে গৃহহীন ও অসহায়দের পাশে দাঁড়াচ্ছে, সেখানে জলঢাকার এই অসহায় বাকপ্রতিবন্ধী নারী ও তার পরিবার কেন এই সহায়তার বাইরে-এ প্রশ্ন এখন এলাকাবাসীরও। গত ২ আগস্ট সকালে সরেজমিনে গেলে এলাকাবাসীর মাধ্যমে এবং গণমাধ্যম কর্মীর কাছে সহযোগিতা চেয়ে নীলফামারী জেলা প্রশাসক, জলঢাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পৌরসভা মেয়র ও সমাজসেবা অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর আবেদন জানান রঞ্জনার পরিবার। বাকপ্রতিবন্ধী রঞ্জনা রানী ও তার পরিবারের জন্য দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়, প্রতিবন্ধী ভাতা, শিশুর শিক্ষাসুবিধা ও খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন ব্যক্তিবর্গ। একটি পরিবারকে বাঁচানো মানে কেবল একটি জীবন নয়, এটি রাষ্ট্রের মানবিক প্রতিশ্রুতির বাস্তব প্রতিফলন।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
